Md. Akter Ali 0

বিসিএস (আইসিটি) ক্যাডার প্রবর্তনের দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর গভর্নমেন্ট আইসিটি অফিসার্স ফোরামের স্মারকলিপি

5093 signers. Add your name now!
Md. Akter Ali 0 Comments
5093 signers. Almost there! Add your voice!
95%
Maxine K. signed just now
Adam B. signed just now

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আপনি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরী, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা, আপনার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের কঠিন এবং দীর্ঘ পথ পরিক্রমার যে সফল সূচনা করেছেন তার অন্যতম অনুসঙ্গ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আপনার দেখানো আলোক বর্তিকাকে অনুসরণ করে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের রাজস্ব খাতে কর্মরত আইসিটি কর্মকর্তাগণ এবং আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত বর্তমান তরুন প্রজন্ম সেই ডিজিটাল বাংলাদেশকে টেকসই রূপ দিতে আপনার পাশে ইস্পাত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অনেক সুদূরপ্রসারী এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো আইসিটি'র জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল। আমাদের দাবীর মূল লক্ষ্য ছিল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তরে কর্মরত প্রথম শ্রেণীর আইসিটি কর্মকর্তাদের একটি একক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে এনে দেশে সুপরিকল্পিতভাবে তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং এর ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা বিধান ও সম্প্রসারণের জন্য একটি দক্ষ জনবল কাঠামো গড়ে তোলা যার প্রয়োজনীয়তা ডিজিটাল বাংলাদেশের টেকসই বাস্তবায়নের জন্য অনস্বীকার্য। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ কয়েক বছর অতিক্রান্ত হলেও এই কাজটি এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। ফলে আইসিটির জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পরও আইসিটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার এখন পর্যন্ত অতিমাত্রায় পরামর্শক নির্ভর। দেশে নির্মীয়মান আইসিটি অবকাঠামোর সঠিক ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যথাযথ নিরাপত্তাবিধান করা না গেলে সরকারের নাগরিক সেবা যেকোন সময় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

৪র্থ শিল্পবিপ্লব আর একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্ষুধা-দারিদ্র-দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আপনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের অবকাঠামো ও দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায়, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে বর্তমানে আমাদের রয়েছে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার, প্রায় ৫০০০ শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক। এলআইসিটি, এলইডিপি সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত নাগরিকের স্বকর্মসংস্থান করা হয়েছে। সহস্রাধিক মাস্টার ট্রেইনারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩ লাখ শিক্ষক ৪০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস নিচ্ছেন। রয়েছে ৪৮,০০০ দপ্তর নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পোর্টাল জাতীয় তথ্য বাতায়ন। অনলাইনে ভ্যাট-ট্যাক্স, সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ই-জিপি পদ্ধতি। কোভিড-১৯ মহামারীর মঝেও সরকারের কর্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে আপনার সরকার কর্তৃক চালুকৃত ই-ফাইলিং পদ্ধতির কারণে। ৩৩৩ ও ৯৯৯ সহ ১৩ টি কলসেন্টারের মাধ্যমে তথ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ৫০০০ ডিজিটাল সেন্টার ও একশপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি হচ্ছে। ই-নামজারি ও ডিজিটাল রেকর্ডরুমের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ই-গভর্নমেন্ট বাস্তবায়ন করে প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে পেশাজীবী আইসিটি জনবলের নেতৃত্বে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরী। সিভিল সার্ভিসে আইসিটি ক্যাডার সৃষ্টি হলে দেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি গ্র্যাজুয়েটরা সরকারী সেক্টরে আকৃষ্ট হবে, হবে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার, কমবে বিদেশী পরামর্শক নির্ভরতা, বাঁচবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, প্রকৌশল, কৃষি, যোগাযোগসহ ইত্যাদি বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে স্বতন্ত্র ক্যাডার থাকালেও আইসিটির জন্য স্বতন্ত্র কোন ক্যাডার নেই। ফলে সরকারী সেক্টরে কর্মরত আইসিটি কর্মকর্তাগণ পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল বাংলাদেশে একজন আইসিটি কর্মকর্তাকে চাকুরীতে যোগদানের পর একই পদে কর্মরত থেকে অবসর গ্রহণ করতে হচ্ছে, এর চেয়ে হতাশাজনক বিষয় আর কী হতে পারে? এহেন বাস্তবতায় নতুন প্রজন্মের আইসিটি শিক্ষিত তরুণ তরুণীরা সরকারের আইসিটি সেক্টরে কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ বোধ না করাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার ফলে তরুন প্রজন্মের মধ্যে আইসিটি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে। এই তরুন প্রজন্মের জন্য দেশে সম্মানজনক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে এই বিপুল সংখ্যক জনবলের মেধা পাচার হয়ে দেশে মেধা শূন্যতার সৃষ্টি হবে। এদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বেরও অংশ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

গত ০৪ জুন ২০০৯ খ্রিঃ তারিখে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২য় বৈঠকের ২৯(৩) নং সিদ্ধান্তে "প্রতিটি উপজেলায় বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়এর অধীন একজন করে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা এবং উক্ত কর্মকর্তাদের আলাদা ক্যাডার সার্ভিস তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা"র সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তৎপরবর্তীতে ২০১৩ সালে আইসিটি অধিদপ্তর গঠনের মাধ্যমে সরকার দেশের সকল উপজেলা এবং জেলায় আইসিটি কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগ প্রদান করে। ২০১৪ সালে সরকার সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য প্রমিত আইসিটি জনবল কাঠামো প্রণয়ন করে। “The computer Personnel Recruitment Rules 1985” নিয়োগ বিধিমালা হালনাগাদ করে সরকার কম্পিউটার পর্সোনেল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ প্রবর্তন করে। ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে আইসিটি বিভাগ বিসিএস (আইসিটি) ক্যাডার সৃজনের লক্ষ্যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অধীনস্থ দপ্তরসমূহের প্রথম শ্রেণীর আইসিটি কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করে এবং বিসিএস (আইসিটি) ক্যাডার সৃজনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব আপনার দপ্তরে প্রেরণ করে। আমরা সরকারের সকল আইসিটি কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নরত এবং সদ্য পাশকৃত শিক্ষার্থীরা আপনার সদয় সিদ্ধান্তের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনি চার যুগের অধিক সময়ব্যাপী অনিষ্পন্ন রাষ্ট্রীয় সমস্যা যেমন, বাংলাদেশের অন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় ইত্যাদির শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন। হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকার অধুনিকায়ন, ঢাকা মেট্রোরেল ও কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মানসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প আপনার সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ। আপনি আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ গোড়া পত্তন করে আমাদের জাতির মানসপটে এক বিরাট মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সূচনা করেছেন। এখন আমরা আপন সামর্থ্যের উপর আস্থা রেখে যেকোন কাজে হাত দেয়ার সাহস করতে পারি। আমরা এখন আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর মুখাপেক্ষী না হয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কুণ্ঠিত বোধ করি না। এই বাংলার মেধাবী ছেলেরা আজ আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে পদক জয় করে আনছে। আজ ইন্টেল, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক এর মত প্রতিষ্ঠানে এই দেশীয় তরুণরা কাজ করছে। বাংলদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান বাঙ্গালি হলিউডে এনিমেটেড মুভি তৈরী করে অস্কার জয় করেছে। তাঁরা আপনার দেখানো স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশনে অবতীর্ণ হয়েছে।

এমতাবস্থায় সরকারের রাজস্ব খাতে কর্মরত আইসিটি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন, আপনি আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিন। আপনি আগামী ১২ই ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে বিসিএস (আইসিটি) ক্যাডার চালুর ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব খাতে কর্মরত প্রায় দুই সহস্র আইসিটি জনবলের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান সমস্যমূহ দূরীকরণসহ দেশের প্রায় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর যে কয়েক হাজার আইসিটি গ্র্যাজুয়েট কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য বেরিয়ে আসছে তাদেরকে সরকারী সেক্টরে সম্মানজনক পেশা গড়ার সুযোগ করে দিন। আপনার এই কীর্তি নদীর স্রোতের মত বহমান রবে অনাগতকাল ধরে যতকাল এদেশের মানুষ সরকারের সেবা প্রাপ্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সুফল ভোগ করবে।

আমরা ২০২০ সালে আইসিটি ক্যাডার সার্ভিস প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং রূপকল্প ২০২১ - ডিজিটাল বাংলাদেশকে টেকসই রূপ দিতে বদ্ধ পরিকর। আইসিটি ক্যাডার বাস্তবায়ন হোক মুজিববর্ষের অঙ্গীকার।

বিনীত নিবেদক,

গভর্নমেন্ট আইসিটি অফিসার্স ফোরাম

Share for Success

Comment

5093

Signatures