Subhajit Bhattacharjee 0

An appeal to the Central Governent of India and State Government of West Bengal

35 people have signed this petition. Add your name now!
Subhajit Bhattacharjee 0 Comments
35 people have signed. Add your voice!
4%
Maxine K. signed just now
Adam B. signed just now

অ্যালকেমিস্ট গ্রুপ ও ডানকান-গোয়েঙ্কার চা বাগানগুলির অচলাবস্থা বিষয়ে

জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে ও সরকারী হস্তক্ষেপে সমাধানের দাবিতে খোলা চিঠি

চা বাগানগুলো নিয়ে একের পর এক সংকটের লাগাতার উঠে আসছে। কল্পনাতীত কম মজুরি, ন্যায্য প্রাপ্য থেকে শ্রমিকদের বঞ্চনা, মালিকদের যথেচ্ছাচার, সরকারী উদাসীনতার ফলশ্রুতিতে চা শ্রমিকদের অনাহার-অর্ধাহার-অপুষ্টি আর বাগান থেকে হাজারে হাজারে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা নিরন্তর ঘটে চলেছে। এহেন বহুবিধ সমস্যার মধ্যে নতুন করে ভয়াবহ মাত্রা নিয়ে এসেছে ডানকান-গোয়েঙ্কা ও অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের বাগানগুলির হালফিলের অবস্থা।

গত বছর ডানকান-গোয়েঙ্কার চা বাগানগুলো নিয়ে ডামাডোল দেখেছি আমরা। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোতে অরাজকতা চালানোর পর গত বছরের এপ্রিল থেকে মালিকরা শ্রমিকদের পাওনাগন্ডা বন্ধ করে দেয় এবং বাগানগুলো ছেড়ে চলে যায় ম্যানেজাররা— কোনও লক আউটের নোটিস ছাড়াই! তার অনেক পরে, সরকার-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার একটুআধটু নড়াচড়া শুরু হয়। এখন কয়েকটা বাগান খুলেছে, যদিও তার বেশিরভাগে ফ্যাক্টরি খোলেনি, পাওনাগন্ডা নিয়ে টালবাহানা চলছে, আর সাতখানা বাগান তো এখনও বন্ধই। কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগ্রহণ, হাইকোর্টের কেসকাছারি, বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু, শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে টেনশন, পানীয় জলের হাহাকার, রেশনবন্টন নিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা, কাঁচা পাতা তোলা নিয়ে অরাজকতা— এই নিয়ে বেঁচে আছে ডানকানসের সাত বন্ধ চা বাগানের বাসিন্দারা।

তারপর সামনে আসতে শুরু করলো অ্যালকেমিস্ট-এর বাগানগুলোর ঘটনা। দশ-বারো বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে তিনটে চা বাগান রয়েছে অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের হাতে— পেশক, কলেজভ্যালি ও ধোত্রে চা বাগান। মোট তিনটে চা বাগানের ২০৭৫ হেক্টর জুড়ে ছড়ানো ৭ টা ডিভিশনে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫৪৪। তাছাড়া আরও হাজার তিনেক ঠিকা শ্রমিক কাজ করতেন এই বাগানগুলিতে। বাগানগুলো এখন নামে খোলা হলেও শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না, পাচ্ছেন না বেতনের অংশ হিসেবে প্রাপ্য আরও নানা দ্রব্যাদি ও সুযোগসুবিধা। তাই শ্রমিকরা পাতা তুলতে গেলেও তা’ সংখ্যায় খুব কম। ২৫-৩০ শতাংশ। অনেকেই রাস্তার কাজ, ১০০ দিনের কাজ, নদীতে পাথর ভাঙ্গার কাজ করে বা আরও নানাভাবে সংসার চালাচ্ছেন। দূরদেশে পাড়িও দিয়েছেন অনেকে। গত বছর শারদোত্সবের সময় থেকে বোনাস নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছিল, তা বাড়তে বাড়তে এখন সমস্যা শিখরে এসে পৌঁছেছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক বকেয়ার পরিমাণ ১.৭২ কোটি টাকা, যার সাথে ওষুধের বিল, জ্বালানী কাঠের পয়সা, ছাতা, চপ্পল ইত্যাদি এবং অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটির বকেয়া হিসেব ধরলে পরিমাণটা ৫ কোটিতে পৌঁছবে। কয়েক মাস আগে অব্দি ছিটেফোঁটা যা-ও বা টাকাপয়সা পাচ্ছিলেন শ্রমিকরা, বিগত দুই মাস সেসবও বন্ধ। সরকারের শ্রম দপ্তরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক মিটিংগুলোতে দুই দফায় সমস্ত বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা দু’-দুবার নির্ধারিত হওয়া সত্ত্বেও মালিকপক্ষ সেসব পূরণ করেনি এবং ইদানিং মিটিংয়ে আসা বা শ্রম দপ্তরের আধিকারিকদের ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছে। আন্দোলনের নানা কর্মসূচী নিয়েছেন বাগানগুলোর শ্রমিকরা।

এই যে বাগান বন্ধও নয়, অথচ শ্রমিকদের বেতন ও প্রাপ্য বন্ধ— এরকম খোলা-বন্ধের মাঝামাঝি মডেলটা যদি ডানকান থেকে শুরু করে অ্যালকেমিস্ট... এবং আরও অনেক মালিকরা মুনাফার উপায় হিসেবে নিতে শুরু করে, তাহলে তো সমূহ বিপদ! শ্রমিকরা না পাচ্ছেন বাগানের মজুরি ও সুযোগসুবিধা, না বন্ধ বাগানের জন্য বরাদ্দ ‘ফাউলাই’ ভাতা! বাগানের লভ্যাংশ অন্য ব্যবসায় ‘সাইফনিং’ করে, বাগানের কুমিরছানা দেখিয়ে নানারকম লোন আদায় করে, অকশন মার্কেটকে পাশ কাটিয়ে অন্য নানাভাবে চা পাতা বিক্রির কারবার চালিয়ে বাগানের আয়ব্যয়ের হিসাবে গরমিল করে এক অভূতপূর্ব লুঠতরাজ চালাচ্ছে চা বাগানের মালিকরা। উদার অর্থনীতি এদেশে চালু হওয়ার পর চা বাগানগুলোতে হু হু করে বেড়েছে ফড়ে মালিকের সংখ্যা, যারা বাগান কিনে তারপর বাগান ছিবড়ে করে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। বাগানগুলোতে কমে যাচ্ছে শ্রমিকের সংখ্যা, কমছে বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রমিকখাতে ব্যয়। চা শিল্পের মত একটা সংগঠিত ক্ষেত্রে আজও চালু নেই ন্যুনতম বেতন! শ্রমিকদের প্রাপ্যের হিসেবে রেশন, চিকিত্সার সুবিধা, ছাতা, জুতো, কম্বল, জ্বালানী কাঠ, শিশুদের জন্য ক্রেশের সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও, সেসব না দেওয়ার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

আমরা এই অরাজকতার অবসান চাই, চাই সরকারের দিক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ। চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি দ্রুত নির্ধারণ ও লাগু করা হোক। বন্ধ ও রুগ্ন বাগানগুলির ব্যাপারে সরকার দ্রুত সদর্থক ব্যবস্থাপনা করুক। মালিকদের দিক থেকে আইনলঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সরকার দৃষ্টিগোচর করুক ও শ্রমিকদের দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনতিবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ নিক। এই দাবিতে জনমতকে শক্তিশালী করুন।

Share for Success

Comment

35

Signatures